1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

এবার চিনি নিয়ে কারসাজি

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৮৩ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট : ভোজ্য তেলের মতো এবার একই কৌশলে চিনি নিয়ে কারসাজির অপচেষ্টা চলছে। রমজানের আগেই এ মিশন সফল করার টার্গেট নিয়ে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট এরইমধ্যে নানা ছক কষে মাঠে নেমেছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেটের ধারা নিম্নমুখী হলেও দেশের বাজারে এ নিত্যপণ্যটির দাম বেড়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই চিনির বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ পণ্যটির মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার পর্যবেক্ষকরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রশাসনকে তদারকি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, টাকার অবমূল্যায়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় চিনির বাজার দর স্থিতিশীল রাখতে গত অক্টোবরের প্রথমভাগে কর ছাড় দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এর ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির শুল্ক কর ১১ দশমিক ১৮ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির শুল্ক কর ১৪ দশমিক ২৬ টাকা কমে আসে। এতে দেশের বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়বে এবং পণ্যটির দাম কমে আসবে এমনটা আশা করা হলেও বাস্তবে তার উল্টোটি ঘটেছে। শুল্ক ছাড়ের পর চিনির দাম কেজিতে পাঁচ টাকার মতো বেড়েছে।

অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে গত আড়াই মাসে চিনির দাম প্রতি মেট্রিক টনে ৬০ ডলারের বেশি কমেছে। ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশনের (আইএসও) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর চিনির দর ছিল প্রতি পাউন্ড ২৩.২৯ সেন্ট। যা ২৫ অক্টোবর ২২.১০ সেন্টে নেমে আসে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে প্রতি পাউন্ডে দাম কমে ১.১৯ সেন্ট। পরবর্তী এক মাসে চিনির নিম্নমুখী আন্তর্জাতিক বাজার দর প্রতি পাউন্ড ২১.১৭ সেন্টে এসে ঠেকে। যা ১০ ডিসেম্বর আরও এক ধাপ নেমে ১৯.৮৮ সেন্টে এসে দাঁড়ায়।

আইএসও’র ট্রেডিং পূর্বাভাস অনুযায়ী, চিনির দামের এই নিম্নমুখী ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। বিশে^র শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিলের রিয়ালের চলমান দুর্বলতার কারণে সেখানকার চিনি উৎপাদকদের রপ্তানি বিক্রিতে উৎসাহিত করছে। এবং ভবিষ্যৎ মজুতে চিনির দীর্ঘ তরলতা সৃষ্টি করছে। এদিকে উন্নত বিশ্ব চিনি সরবরাহের পূর্বাভাস দামের ওপর নির্ভর করে। ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশন (আইএসও) তার ২০২৪-২৫ বিশ্বব্যাপী চিনির ঘাটতির পূর্বাভাস মাইনাস ৩.৫৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে কমিয়ে মাইনাস ২.৫১ মিলিয়ন মেট্রিক টন করেছে এবং তার ২০২৩/২৪ উদ্বৃত্ত অনুমান ২ লাখ প্লাস মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে ১.৩১ মিলিয়ন মেট্রিক টন করেছে।

যদিও ভারতের চিনি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ১ অক্টোবর থেকে সেখানকার মিলগুলো ২.৭৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন উৎপাদন করেছে, যা মূল রাজ্যগুলোতে বিলম্বিত অপারেশনের কারণে বছরে ৩৫.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। নভেম্বরের শেষের দিকে ৩৮১টি মিল চালু ছিল, যা এক বছর আগের ৪৩৩টি ছিল। ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ কো-অপারেটিভ সুগার ফ্যাক্টরিস অনুমান করেছে, ভারতের চিনির উৎপাদন ২০২৪-২৫ সালে ২৮ মিলিয়ন মেট্রিক টনে নেমে যাবে। যা গত বছরের ৩১.৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে রপ্তানি কোটা সীমিত করেছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দামের নিম্নমুখী ধারার পূর্বাভাস দিলেও আগামী মাসের শুরুতেই দেশের বাজারে এ পণ্যটির দাম বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা জোরালো হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষকরা জানান, রোজার মাসে ইফতারিতে অতিপ্রয়োজনীয় চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই সময় প্রশাসনের তদারকি বাড়ায়। তাই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রোজা শুরুর এক-দুই মাস আগেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। অবৈধ মজুত বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে এসব পণ্যের দাম আগেভাগেই বাড়িয়ে দেয়। সে হিসাবে আগামী বছরের শুরুতেই চিনির দাম ধাপে ধাপে বাড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন।

এদিকে বাজারে চিনির সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক থাকলেও দেশীয় ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম না কমিয়ে বরং তা বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ডিলাররা প্রতি কেজি চিনি ১২২ টাকা দরে বিক্রি করছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনি শিল্প করপোরেশনের এ পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৪০ টাকা দরে। অথচ শুল্ক কমানোয় আগে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চিনি প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা বা তারও কম হওয়ার কথা ছিল।

তবে আমদানিকারকদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে বুকিং করা পণ্য এখনো বাজারে আসেনি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বুকিং দিয়ে অপরিশোধিত চিনি এনে তা পরিশোধন করে বাজারে আসতে আড়াই মাসের বেশি সময় লাগে। ফলে দেশীয় বাজারে চিনির দাম এখনো কমেনি। এ ছাড়া পরিশোধিত চিনি তেমন আমদানি করা হয়নি।

যদিও দেশের আমদানি বাণিজ্য পর্যবেক্ষণকারীরা এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা জানান, অতি সম্প্রতি পাকিস্তানের কাছ থেকে ২৫ হাজার টন চিনি কিনেছে বাংলাদেশ। উচ্চ মানসম্পন্ন এই চিনি আগামী জানুয়ারি মাসেই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে।

এদিকে ভারত থেকে চিনি আমদানি আপাতত বন্ধ থাকলেও সে দেশ থেকে চোরাইপথে যে বিপুল পরিমাণ এ পণ্য দেশে ঢুকছে তা বিজিবির জব্দ তালিকাতেই স্পষ্ট। গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই দুই মাসেই সীমান্তে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা ৫ লাখ কেজির বেশি চিনি জব্দ করেছে বিজিবি।

বিজিবি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, অবৈধ পথে আসা এসব চিনির বেশির ভাগই এসেছে সিলেট ও ফেনী সীমান্ত এলাকা দিয়ে। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের বাজারে চিনির দাম দ্বিগুণ হওয়ায় অবৈধ পথে চিনি আসার এ প্রবণতা বেড়েছে। কখনো বালির ট্রাক, আবার কখনো ভুসির আড়ালে আনা হচ্ছে এসব চিনি। স্থানীয় প্রভাবশালী ও প্রশাসনের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে আসা এসব চিনি। শুধু এই দুই মাসেই নয়, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও ভারতের বিভিন্ন সীমান্তে বিজিবি বিপুল পরিমাণ চোরাই চিনি জব্দ করেছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, সীমান্তে জব্দকৃতের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দেশের বাজারে এরই মধ্যে প্রবেশ করেছে। মান যাচাই না করা এসব চিনি বেশ কয়েকটি নামিদামি ব্র্যান্ডের মোড়কে বাজারজাত এবং উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, দেশে বিক্রি হওয়া চিনির একটি বড় অংশ আসে প্রতিবেশী ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ চোরাচালানে যুক্ত ছিলেন। ওই সরকারের পতনের পর কিছুদিন চোরাচালান কম ছিল। তবে কয়েকদিন যাওয়ার পরই অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা এ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় ফের তা আগের মতো রমরমাভাবে চলছে।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত থেকে আসা চিনির একটি বড় অংশ এখন বাজারে না ছেড়ে তা বিভিন্ন জেলার বৈধ ও অবৈধ গুদামে মজুত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে বৈধভাবে আমদানিকৃত চিনি থেকে বিক্রীত অংশ বাদ দিয়ে মজুত স্বল্পতা দেখিয়ে বাজার অস্থির করার আগাম ফন্দি আঁটা হয়েছে। এ লক্ষ্যে একাধিক সিন্ডিকেটের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা অভিযোগ তুলেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতি বছর রমজানের আগে বাজার সিন্ডিকেট নানা অপকৌশলে চিনির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। তাদের কারসাজিতে গত রমজানে দেশের ইতিহাসে চিনির সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি সরকারি মিলের চিনির সর্বোচ্চ খুচরা দাম ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিনিও একই দামে বিক্রি হয়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চিনি আমদানি করায় তারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। যখন-তখন বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। এ সুযোগ বন্ধ করা না গেলে সিন্ডিকেটের কারসাজি মোকাবিলা করা কঠিন হবে।

ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, মিল মালিকরা কী পরিমাণে চিনি আমদানি করেন এবং প্রতিদিন কী পরিমাণে বাজারে সরবরাহ করেন তার সঠিক তথ্য অনেক সময় দিতে চান না। এসব তথ্য চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস থেকে সংগ্রহ করতে হয়। সঠিক তথ্য না থাকার কারণে চিনির মজুদেরও সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে কোন কোম্পানি কী পরিমাণ চিনি আমদানি করল, কোন কোম্পানি কতটুকু চিনি মিলে পরিশোধন করল এবং কোন কোম্পানি কী পরিমাণ বাজারে সরবরাহ করল তার তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। একইভাবে ডিও ব্যবসায়ী কী পরিমাণে চিনি নিল, পাইকারি ব্যবসায়ী কী পরিমাণে চিনি নিল তার তথ্যও সংগ্রহ করতে হবে। যদিও এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা তথ্য দিতে বাধ্য হবে- এমন কোনো আইন নেই। কিন্তু এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে আইন করে হলেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরকারকে এসব তথ্য নিতে হবে।

একইসঙ্গে বিভিন্ন গুদামে হানা দিয়ে সেখানে অবৈধভাবে চিনি দীর্ঘদিন মজুত করে রাখা হচ্ছে কিনা তা যাচাইয়ের তাগিদ দেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, গত ক’দিন আগে বাজার থেকে ভোজ্য তেল উধাও হয়ে গেলেও সরকার কেজিপ্রতি ৮ টাকা দাম বাড়ানোর পরপরই নানা বৈধ-অবৈধ গুদাম থেকে হাজার হাজার লিটার সয়াবিন তেল বের হয়ে আসে। অথচ বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হওয়ার পর এসব গুদামে হানা দেওয়া হয়নি।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..